চকরিয়ায় মা-মেয়েকে নির্যাতন মামলার প্রধান আসামী

চেয়ারম্যান মিরানকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ!

এ কে এম ইকবাল ফারুক,চকরিয়া ◑

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের দাবী, ইউপি চেয়ারম্যান মিরানকে গ্রেপ্তারে তার গ্রামের বাড়ি হারবাং মহাজন পাড়া ও ইউনিয়ন পরিষদে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। মিরান চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারে ও তার অবস্থান জানতে থানা পুলিশ সোর্স নিয়োগের প্রযুক্তির সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।

কিন্তু স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান বর্তমানে হারবাং এলাকাতেই অবস্থান নিয়ে তার দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করলেও প্রভাবশালী মহলের ইশারায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছেনা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে কোন মুহুর্তে গ্রেপ্তার হচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান মিরান। মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার পারভীন আক্তার নামে এক নারী। ওই মামলায় চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০-৩০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়। এ মামলা দায়েরের ঘটনা প্রায় তিনদিন অতিবাহিত হলেও এখনো ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে এ আলোচিত ঘটনায় জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি নতুন করে সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। ওই কমিটিকে ২৬ আগষ্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) জেলা প্রশাসক মো, কামাল হোসনেরে কাছে তদন্ত কমিটির প্রধান ও কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক শ্রাবস্তী রায় এর আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সময় বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে গরু চুরি মামলার তিন নারী আসামী আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হলেও এ মামলার অপর দুই পুরুষ সদস্য কারাগারে থাকায় তাদের জবানবন্দি নিতে পারেনি গঠিত তদন্ত দল। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি তারা।

নির্যাতনের শিকার ভোক্তভোগিরা জানান, আলোচিত এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় মামলা হওয়ার দুইদিন পার হলেও এখনো প্রধান আসামী বা ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার প্রধান আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন বাদী তার সন্তানরা। তারা দ্রুতমগ সময়ের মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন ভোক্তভোগিরা।

মামলার বাদি পারভীন আক্তারের আইনজীবি এডভোকেট ইলিয়াছ আরিফ বলেন, আগামী সোমবার কারাগারে থাকা এমরান ও ছুট্টুর জন্য চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের জামিনের আবেদন করা হবে। আশা করি ওইদিনই আসামীরা জামিনে মুক্ত হবেন।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, সোর্স নিয়োগ ও বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান মিরানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একইভাবে এ মামলার অপর আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত: গত ২১ আগস্ট দুপুরে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে রশিদিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে হারবাং ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও কতিপয় উৎসোক জনতার বিরুদ্ধে। পরদিন শনিবার দিবাগত রাতে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা-মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব পদ মর্যদার) শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৪ আগস্ট দুপুরে গঠিত এ তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।